ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ই আশ্বিন ১৪৩২


টেকনাফে র‌্যাব-বিজিবির দুর্ধর্ষ যৌথ অভিযান; অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য আটক এবং ৮৪ ভুক্তভোগী উদ্ধার


প্রকাশিত:
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৭

কক্সবাজারের সীমান্ত জনপদ টেকনাফে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড (বিজিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের মূল আস্তানায় আঘাত আঘাত করে অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার ও মানবপাচারকারী চক্রের ৩ জন সদস্য আটক সহ অক্ষত ৮৪ জন ভুক্তভোগী কে উদ্ধার করেছে।

বিজিবি সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন যাবত মানব পাচার রোধে টেকনাফ ব্যাটেলিয়ন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযান পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন অভিযানে, উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগী এবং আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে মানব পাচারকারী চক্রগুলোর গোপন আস্তানা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় ২ বিজিবি।

সর্বশেষ, গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি জানতে পারেন যে, টেকনাফের বাহারছড়া,কচ্ছপিয়া এলাকার গহীন পাহাড়ে একটি পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগীকে আটকে রেখেছে।

খবর পেয়ে অধিনায়ক, ২ বিজিবির নেতৃত্বে একটি মানব পাচারবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে একজন পাচারকারীকে আটক এবং ৪ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বিজিবি । উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের কাছ থেকে লোমহর্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান বিজিবি ।

ভয়ানক, হিংস্র এবং সংঘবদ্ধ চক্রকে সমূলে নির্মূল করতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি এবং অধিনায়ক র‌্যাব ১৫, লেঃ কর্নেল কামরুল হাসান, পিএসসি একটি সমন্বিত ও বৃহৎ যৌথ অভিযানে নামেন।

উভয় বাহিনীর গোয়েন্দা নজরদারি এবং ভুক্তভোগীদের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি ও র‌্যাবের কয়েকটি চৌকস আভিযানিক দল লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকা থেকে রাজাছড়া পাহাড়ের ওপরে রুদ্ধশ্বাস চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযানের প্রথম ধাপে ১৪ জন এবং পার্শ্ববর্তী আরেকটি পাহাড় থেকে ১৩ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয় করেন বিজিবি ও র্যাব।

এরপরই, রাজাছড়া এলাকার অন্য একটি পাহাড়ে অভিযান চালানোর সময় পলায়নরত পাচারকারীরা মরিয়া হয়ে পাহাড়ের উপর থেকে আগুয়ান যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে প্রথমে ২ রাউন্ড ও পরে আরো ১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং অপহরণকারীরা এ সময় বেশ কিছু জিম্মিকে পাহাড়ের নিচে ঠেলে দেয়। নিরপরাধী ভুক্তভোগীদের জীবন রক্ষার্থে পাল্টা গুলি না ছুড়ে যৌথ বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পাহাড়াটিকে ঘিরে রেখে খাড়া ঢাল বেয়ে সশস্ত্র পাচারকারীদের ধরতে পাহাড়ের চূড়ায় কৌশলে দুঃসাহসিক অভিযান চালায় র্যাব ও বিজিবি।

বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের সাহসিকতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রায় ১২ ঘন্টার দুঃসাহসিক অভিযান শেষে ২ জন পাচারকারীকে আটক এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করতে সক্ষম হন র্যাব ও বিজিবি । এছাড়াও, তাদের আস্তানা তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি দেশীয় রামদা ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয় করেন এবং এ সময় ৩টি অস্ত্রের চেম্বার থেকে ৩ রাউন্ড তাজা গুলি জব্দ করেন বিজিবি ও র্যাব এর যৌথ আভিযানিক দল।


র‌্যাব ও বিজিবি সূত্রে আরো জানা যায়, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে যৌথ আভিযানিক দলটি বিভিন্ন পাহাড় ও তার পাদদেশ থেকে ৫১ জন এবং পাহাড়ের চূড়া থেকে আরও ৬ জন ভুক্তভোগী ও একই দিন দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বড়ইতলি এলাকা থেকে আরও ৪ জনকে উদ্ধার করেন র্যাব ও বিজিবি আভিযানিক দল।

সামগ্রিকভাবে, যৌথ অভিযানে মোট ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে পাচারকারীদের কবল থেকে মুক্ত করেছে র্যাব ও বিজিবি আভিযানিক টিম।

এই অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন আসামী টেকনাফের সালামত উল্লাহর পুত্র আব্দুল্লাহ (২১) আবুল হোসেনের পুত্র সাইফুল ইসলাম (২০) ও মোঃ ফিরোজের পুত্র মোঃ ইব্রাহিম( ২০) এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ হস্তান্তর ও পলাতক আসামী টেকনাফের মৃত মীর কাশেমের পুত্র রেজাউল করিম (৩৭) ও মমতাজ সওদাগরের পুত্র আয়াতুল তনজিদ (৩০) এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ সূত্রে জানা গেছে।

বর্ডার গার্ড (বিজিবি) রামু সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মহিউদ্দিন জানান,এই সফল যৌথ অভিযান মানব পাচারকারী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিজিবি এবং র‌্যাবের জিরো টলারেন্স নীতিরই প্রতিফলন। দেশের নিরাপত্তা ও মানুষের জীবন রক্ষায় এই ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।