ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার পাশে ব্যবসায়ী নেতারা


২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:৫৬

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৬

টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন সরকারের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নিতে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার সাহস ও অভয় দিলেন ব্যবসায়ী নেতারা।

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে ব‌্যবসায়ী সংগঠক ও শিল্পপতিরা পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্পপতিরা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান এবং সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক তার জন‌্য সাহস দেন।

আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত ১০ বছর বর্তমান সরকারের যে অ্যাচিভমেন্ট এটা আজকে নতুন করে কিছু বলার নেই এবং আপনারাও শোনার জন্য বসে নেই। আমার মনে হয়, সরকার যেটুক অ্যাচিভমেন্ট করেছে সেটা আমরা দেশে-বিদেশে সর্বত্র তার প্রতিফলন দেখতে পেরেছি।’

এক সময় বাংলাদেশকে অভাব-অনটন, দুর্ভোগ-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের আখড়া বলে আখ্যায়িত ছিল কিন্তু আজকে সেইখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই আজকের দিনে আমরা বাংলাদেশি হিসাবে গর্ববোধ করি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের জ্বালানি নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুর প্রতি সরকারের যে দৃষ্টি ছিল, এ সম্পর্কে আমি যদি বলি কিছু করে নাই। তাহলেও কিন্তু কেউ বিশ্বাস করবে না। আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকার ব্যবসাবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন করেছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। এই ব্যাপারে তারা হৃদয়াঙ্গম শুধু করেন নাই তার ওপরে কার্যক্রমও প্রসারিত করেছেন। সামনেও করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

‘আমি মনে করি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য যে পরিবেশ দরকার, সে পরিবেশ এবং ব্যবসা করার জন্য যে ইনপুট দরকার সেইগুলো সরকার প্রোভাইড করেছে এবং প্রোভাইড করার জন্য সামনে আরও অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে সরকার পুনরায় ফিরে আসবে পত্র-পত্রিকার যে প্রেডিকশন এবং বিভিন্ন মত-অভিমত; তাতে প্রমাণিত হয়, সরকার আবার সরকার গঠন করবে।’

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘আমরা আজ একটি যুগসন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা এগিয়ে যাব না পেছনের দিকে তাকাব। আমার মনে হয় পেছনের দিকে তাকানোর কোনো সুযোগ নাই। কারণ গত ১০টি বছরে প্রধানমন্ত্রী প্রজ্ঞা-অভিজ্ঞতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আগে দেশের ভাবমূর্তি ছিল ক্ষুধা দারিদ্র্য অন্ন, বস্ত্রের সংস্থানহীন একটি দেশ। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। যে উন্নয়ন বাংলাদেশে হয়েছে তার অভাবনীয়। দেশে আজকে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। এই মহাযজ্ঞকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে। সেই প্রত্যাশা আমাদের সবার। তাই আগামী দিনে এ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আগামীর অনগাত দিনগুলোও আপনার। আপনি আপনি যতদিন কর্মক্ষম থাকবেন এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশ যাতে পৃথিবীর বুকে সব থেকে মাথা উঁচু স্থান দখল করে।’


বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা যখনই ওনার কাছে যাই যে কোনো কাজে যাই, সকালে রাতে দুপুরে যখনই যাই তখনই ওনাকে পাই। ওনার দরজা আমাদের জন্য খোলা থাকে। উনি সবসময় একটা কথা বলেন, ‘আমরা সরকার চালাই, তোমরা ব্যবসা করো। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে, সরকার সরকার চালাবে। ওনার সরকার একটি ব্যবসাবান্ধব সরকার। এখানে কোনো সন্দেহ নাই। আমরা আজকে এখানে উপস্থিত হয়েছি, আপনাকে সমর্থন জানানোর জন্য। আপনার সরকারকে আগামী দিনে আবার আমরা দেখতে চাই, সে জন্য।’

আরও পড়ুন: যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসার আকাঙ্ক্ষা নেই

শিল্পপতি আলহাজ সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী শেখ হাসিনাকে তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী করে বলেন, ‘আপনি জীবনে আরও কতবার যে প্রধানমন্ত্রী হবেন আল্লাহই জানে, আমরা জানি না।’

এরপর তিনি ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে… বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।” দরাজ গলায় শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু দিয়েছে সোনার বাংলা। আর আমরা আমাদের মাদার অফ হিউম্যানিটি, আপনাকে নিয়ে আমরা ‘হীরার বাংলা’ তৈরি করব।

সারাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমরা আজকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, স্বাধীনতার স্বপক্ষে থাকব, না এই স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকব? যদি আমরা স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থাকি, তাহলে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা সবাই এক হয়ে একসঙ্গে হাত হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনেন। আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আমরা আমেরিকা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কারও চেয়ে কম না। আমরা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হকের স্ত্রী ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য গত দশ বছরে বাংলাদেশের মানচিত্র বদলে গেছে দাবি করেন। তিনি একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন বলেন, ‘আমার প্রয়াত স্বামী আনিসুল হক যখন অসুস্থ, লন্ডনে। তখন প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে চল্লিশ মিনিট ফোনে কথা বলেছিলেন এবং সেই ফোনের একটি বিষয়বস্তু ছিল পদ্মা সেতু। আমি কিছুতেই বুঝে পাইনি কেন ওনি আনিসের শরীর কেমন আছে, এটা জিজ্ঞেস করার পরপরেই আমার মন ঘুরিয়ে দিয়ে পদ্মা সেতুর গল্প করেছিলেন প্রায় ৪০ মিনিট। অনেক দিন পরে জিজ্ঞেস করেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন করেছিলেন আপনি এই গল্পটি। উনি বলছিলেন, তোমার মন ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য। যাতে তোমার মনে কষ্ট না লাগে।’


‘এমন একটি মানুষ যিনি হৃদয়ের কথা বলেন। হৃদয়ের কথা বোঝেন। তার এই হৃদয়ের গল্প গ্রোথিত হোক নতুন করে বারংবার, আমরা সকলে তাই প্রত্যাশা করি এবং এই আশায় থাকতাম’।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল মুক্তাদির বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের দিকটি তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের পূর্ব দিকে মিয়ানমার, তারপরে চারপাশে ভারত ও চীন। জিও পলিটিক্যাল সিচুয়েশনে বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর। এই অবস্থায় বাংলাদেশকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া, অতিশয় দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু আমরা খুবই ভাগ্যবান, আমরা এরকম একজন প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছি। যিনি, গায়ে তেল মেখে চলে যাব কিন্তু আমাকে কেউ ধরতে পারবে না, আমি সামনে চলে যাবো।’ আমাদের প্রধানমন্ত্রীও এইভাবে আমাদের জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আজকে আমরা যে অর্থনৈতিক সোপান গড়া শুরু করেছি, তা যেন চালিয়ে যেতে পারি, আমরা এই কনটিনিউটি চাই। আমরা চাই, ওনি বছরের পর বছর ধরে আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে যান। যাতে করে বাংলাদেশ শুধুমাত্র সমৃদ্ধশালী জাতি নয়, বাংলাদেশ ২০৪১ সালে পৃথিবীর সবচাইতে সমৃদ্ধশালী জাতি হিসাবে অভিহিত হয়। আমরা আপনার সঙ্গে আছি, ব্যবসায়িক সম্প্রদায় সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে আপনার কনটিনিউটি চাই।’

অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারাও প্রত্যাশা করে বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে সাত কোটি বাঙালিকে দেশি-বিদেশি কোনো অপশক্তি দাবিয়ে রাখতে পারে নাই। আপনার বলিষ্ঠ ও ভবিষ্যতদর্শী নেতৃত্বে ১৭ কোটি বাঙালিকে দাবিয়ে রাখারও প্রশ্ন ওঠে না। বিজয়ের মাসে জাতি আরেকবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় অর্থনীতি এবং বৃহত্তর সমাজ গঠনে অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে আপনার পাশে সবসময় আছে এবং থাকবে।’

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাত কবীর, সাবেক সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, একে এম সেলিম ওসমান, টিপু মুনশি, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলি, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সোনিয়া বশীর কবির, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, বিএসআরএম স্টিলের চেয়ারম্যান আলী হুসেন আকবর আলী, বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালী চৌধুরী, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরসহ অনেকে। বক্তব্যের পর্ব শুরুর আগে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন শমী কায়সার।