ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য
পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতির মুখে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানিও, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাবপত্র, সুতো, সুতো দিয়ে তৈরি জিনিস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ছিল ভারত সরকার। তার আগে ৯ এপ্রিল কলকাতা বিমানবন্দর দিয়েও বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এবার ফের ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের জেনারেল (ডিজিএফটি) বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে কিছু পাটজাত পণ্য এবং বোনা কাপড়, সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তবে এটি কেবল মুম্বাইয়ের নাভার শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়েই আমদানি করা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ফের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পেট্রাপোলের ব্যবসায়ীরা। কাজ হারানোর শঙ্কায় আছেন শ্রমিকরা।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, জুট আইটেম আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সরাসরিভাবে জড়িত। কেননা, যত ইন্ড্রাস্ট্রি পশ্চিমবঙ্গে আছে ভারতে তার দু-চারটা আছে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের জুট আমরা ইমপোর্ট করে থাকি। আমাদের জুট ইন্ডাস্ট্রি চলে, কারখানা চলে। শুধু তাই নয় আমাদের পোর্টে যে লেবার আছে তাদের বেশিরভাগই এই জুট আইটেমের ওপর চলে।
কার্তিক চক্রবর্তী আরও জানান, এক সময় লোকে বলতো বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের চট-পাটের ব্যবসা। ভারত সরকার গত শুক্রবার যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তাতে বলছে, জুটের পণ্য এবং কাঁচা জুট সমস্তটাই মুম্বাইয়ের নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর থেকে আনা যাবে। সরকারকে দেখতে হবে জুট যেখান থেকে আসবে তার কারখানা কত কাছাকাছি রয়েছে। যাতে খরচটা কম হয়। এখন সরকার হঠাৎ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলছে এই সমস্ত পণ্য অন্য জায়গা থেকে আনবে।
এই বিজ্ঞপ্তির ফলে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হবে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই বিষয়ে কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আনতে গেলে আমাদের অগ্রিম অর্থ দিতে হয়। তারপর বাংলাদেশ থেকে পণ্য ভারতে আসে। যারা কোটি কোটি রুপি অগ্রিম দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশে, তারা এখন কিভাবে আনবে সেটা তাদের ব্যাপার।
কার্তিক চক্রবর্তী ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে এক হাজারের বেশি লেবার আছে, যারা কাজ করে বন্দরে। যার মধ্যে ট্রান্সপোর্টার রয়েছে এবং লোকালের সমস্ত গাড়িগুলো ব্যবহার হতো। সমস্তটাই নির্ভর করে বাংলাদেশের ওপর। সে সমস্ত প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে।
কার্তিক চক্রবর্তী সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মানুষজন কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, একসময় সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হওয়ার ফলে সে সমস্ত বন্ধ করে তারা সঠিক পথে ফিরে আসে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি রুপির এই পণ্য রফতানি হয়েছিল। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ স্থলবন্দর দিয়ে হয়েছিল।