ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে তারুণ্যভাবনা ও আগামীর বাংলাদেশ


১৭ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৮

আপডেট:
১৭ মার্চ ২০২১ ২০:০৪

আজ বাংলা ০৩ চৈত্র,১৪২৭ বঙ্গাব্দ। আজ থেকে শতবছর পূর্বের এমনি এক ০৩ চৈত্রে আবহমান বাংলার চৈত্রদিনের কোন এক সজীব স্নিগ্ধ প্রত্যুষে শত শত বছর ভিনদেশি শাসকদের দ্বারা শোষিত বাংলামায়ের জঠর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন বাংলার মাটি ও মানুষের পরমবন্ধু, বিশ্বের শোষিত মানুষের মুখপাত্র, মহাকালের দিগ্বিবিজয়ী প্রমিথিউস সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার জন্মদিনে পরমপিতার চরণে  প্রাণসিক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ভালোবাসা নিবেদন করছি। 


জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মুজিববর্ষ(MUJIB100) হিসেবে ২০২১ সালকে উদযাপনের মহাকর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও ইউনেস্কোভুক্ত বিশ্বের ১৯৫ টি দেশ এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি আখ্যান হয়ে ইতিহাসের পাতায় দেশ ও জাতিকে সম্মানজনকভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে।

সহস্র বছর ভিন্ন দেশীয় ও সংস্কৃতির শাসকেরা পদ্মাযমুনার পলিবিধৌত উর্বরভূমির বদ্বীপ বাংলাকে শাসন করে এসেছে। যে ইতিহাসে বাংলা ও বাঙালির কৃতিত্ব, সম্মান ও মর্যাদার কোন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বাংলার বদ্বীপের মানচিত্র বীরত্বের জন্য সামগ্রিকভাবে দুনিয়ার কাছে সর্বপ্রথম সম্মান ও মর্যাদার স্বীকৃতি পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি শোষণ বঞ্চনার শেকল ভেঙে স্বাধীকার সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে নেবার মধ্য দিয়ে। 


আর সমগ্র দুনিয়ায় বাঙালির বদনাম হয়েছে বহুবার সর্বপ্রথম এই বদনামের ঘৃণ্য যাত্রা শুরু হয় ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে মীর জাফর গংদের ভিনদেশী লর্ডক্লাইভকে সাহায্য করে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে অস্তমিত করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আধুনিকযুগে বাঙালির ললাটে বৈশ্বিক বদনাম ও ঘৃণার সিলমোহর লাগানো হয় পাকিস্তানের স্বার্থহাসিলের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় কতিপয় পথভ্রষ্ট বাঙালি সন্তানের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। 

এরই প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী প্রথিতযশা সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী,অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদগণ বাঙালির প্রতি নানান ভাষায় অভিশম্পাত ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। যার কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি, 
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরবর্তী সময়ে বিশ্বখ্যাত নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট মন্তব্য করেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’

বাংলা ১৩২৬ সনের ৩ চৈত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর মৃত্যুবরণ করেন ১৩৮২ বঙ্গাব্দের ২৯ শ্রাবণ। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য ছিলো প্রেরণাদায়ক ।’


ব্রিটেনের তদানিন্তন সাংসদ জেমসল্যামন্ড বলেছিলেন,- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু পিতৃহীন হয়নি, বিশ্বের সবাই হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’ ব্রিটিশলর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার চেয়ে-ও মহান নেতা।’ ইরাকের সাবেক শক্তিমান রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ।তাই তিনি অমর।’ জাপানি নাগরিক মুক্তি ফুকিউরা বাঙালি দেখলেই বলতেন- ‘তুমি কি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জেনে রেখো বহুকাল এশিয়াতে তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহহৃদয়ের অধিকারী নেতার জন্ম হবেনা।’

বিপ্লবের বরপুত্র ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিতমানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশালহৃদয়ের বন্ধুকে।’ ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন- ‘আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিলো মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।’

বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার খবরে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এতটাই বেদনাহত হয়েছিলেন যে, তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘তোমরা আমারই দেয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে খুন করে ফেললে! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি। 'জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথা কাউণ্ডা বলেছিলেন- ‘শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’

প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়নের প্রয়াসে উল্লেখ করেন, ‘শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উঁচুতে ছিলো তাঁর মাথাটি, সহজেই চোখে পড়তো তাঁর উচ্চতা। একাত্তরে বাংলাদেশকে তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন, আর তাঁর পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিল তাঁর সমকালীন এবং প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। তারা জনগণকে উন্মাদ আর মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। একাত্তরের মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলো শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ আগ্নেয়গিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।’

সেসময় নিজের জন্মদাতা পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল সদস্যের হত্যাকাণ্ডের খবরশুনে শোকে পাথর হতবিহ্বল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসার জন্য জার্মানির একটি এয়ারপোর্টে তাঁর পাসপোর্টটি ইমিগ্রেশন অফিসারকে দেখালে সেই অফিসার পাসপোর্টটি দেখেই শেখ হাসিনাকে ঘৃণাভরে বললেন, ‘ছিঃ তোমরা বাংলাদেশিরা খুব জঘন্য একটি জাতি, যেই মানুষটি তোমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তাঁকেই তোমরা মেরে ফেললে?’


উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছিল তদানিন্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধীতাকারী  তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।’ অথচ, এই হেনরি কিসিঞ্জার-ই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে সম্বোধন করে অসম্মান করতেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির যে বৈশ্বিক বদনাম হয় তা সুদীর্ঘকাল বহন করতে হয় এ জাতিকে। পরবর্তীকালে অবৈধ অন্ধকারের প্রতিভু কালোচশমাধারী বাংলা লিখতে ও পড়তে না জানা স্বৈরশাসক মেজর জিয়াউর রহমান এর মাধ্যমে পুরষ্কৃত হয় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্য নিষিদ্ধ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে লাখো শহীদের রক্ত ও মা বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলার সংবিধানকে করা হয় লাঞ্চিত। সংবিধানের ৪ মূলনীতির অন্যতম মূলনীতি ধর্মননিরপেক্ষতাকে বাতিল করে পুনরায় সংবিধানকে পঙ্গু করার ঘৃণ্য পাশবিকতায় মেতে উঠেন এই স্বৈরাচার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধকালীন নিরিহ বাঙালি নারীদের গণধর্ষণ ও নিরস্ত্র অসহায় বাঙালিকে গণহত্যার মূলহোতা চক্র, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া পথ পুনরায় অবমুক্ত করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে জিয়ার মুখোশ খুলে তার ভেতরকার পাকিস্তানি অস্তিত্বের কঙ্কাল প্রকাশ্যে চলে আসে৷ সেসময় স্বাধীন বাংলাদেশ নামে বাংলাদেশ হলেও কার্যত প্রশাসনিকভাবে পাকিস্তানের গোলামীর ডমিনিয়নে পরিণত হয়। পাকিস্তানের আদলে ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে বাংলার পতাকার ঘাঢ় সবুজ রঙ। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রভৃতির নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তান, টেলিভিশন পাকিস্তান ইত্যাদির আদলে রেডিও বাংলাদেশ, টেলিভিশন বাংলাদেশ ইত্যাদি করা হয়।

বঙ্গবন্ধুহীন বাঙালীকে শোষণ বঞ্চণার নয়া মুখোশধারী পাকিস্তানের দালাল সামরিক স্বৈরশাসনকে অবসান ঘটাতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এক অসম প্রতিকূল লড়াইয়ের সমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর নৌকা নিয়ে রাজপথে রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতন ঘটাতে সক্ষম হলেও আওয়ামীলীগের মধ্যে সাংগঠনিক নেতৃত্বের বোঝাপড়ার কিছু ভুল বুঝাবুঝি ও অন্তর্কোন্দলের সুযোগ নিয়ে অপঘাতে নিহত একজন ভয়ঙ্কর সামরিকশাসকের হাতে সেনানিবাসে সৃষ্ট তথাকথিত লেবাসধারী গণতান্ত্রিক দল ১৯৯০ পরবর্তীতে সরকারগঠন করে শুরু করেন এদেশ ও জাতির শেকড়ের ইতিহাস বিকৃতির কলঙ্কিত অধ্যায়।

জাতির পিতার সমান্তরালে একজন ভয়ানক হাজার হাজার মানুষকে হত্যাকারী সেনা অফিসারকে প্রতিষ্ঠিত করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা। শুধুমাত্র তাদের দলীয় রাজনৈতিক ফায়দা লাভের অযৌক্তিক পথে পা বাড়িয়ে দেশের নতুন প্রজন্মকে সত্য ইতিহাস জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নগ্ন প্রয়াস চালাতে থাকে এই  দেশের সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণাকারী বর্বর এ দলটি।
পরবর্তিকালে দলটি যুদ্ধাপরাধী সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়ে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয় জঙ্গিবাদ ও আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক গণহত্যার মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার ভয়ংকর শকুনস্বভাব অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বহুবার হত্যা করে সরিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করে আসছে।

দুর্নীতিতে এদেশকে লাগাতার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে এদেশকে চূড়ান্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষোলোকলা পূর্ণ করে চিরশত্রু পাকিস্তানের তাবেদারি অব্যাহত রাখে। অন্যদিকে জাতির পিতার রক্তের সুযোগ্য উত্তরসুরী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশ থেকে গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি,সমুদ্রসীমার অধিকার আদায়, ছিটমহল সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে দেশের ভৌগোলিক আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী বাংলা ও বাঙালির স্বপ্নের সোনালী অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ সম্মানের অনন্য আসনে সমাসীন হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে আজ যখন সারা বিশ্বের স্বীকৃত বিশ্ববন্ধুর মর্যাদা লাভ করেছেন।

তখন দেখা যায় একটি দেশ ও জনগণবিরোধী প্রতারকচক্র বঙ্গবন্ধুর মর্যাদাহানি  করার হেন প্রচেষ্টা নেই যে তারা করছেনা। পাকিস্তানি এজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা আজ-ও দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে, তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের অবদানকে তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

শিক্ষিত তরুনদের দেশ ও জাতির শেকড়ের সাথে, ইতিহাসের সাথে আরোও সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। কোমলমতি শিশু কিশোরদের কাছে ইতিহাসকে আরোও সহজলভ্য করার প্রয়াস হিসেবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প,কবিতা, উপন্যাস,গবেষণা, নাটক, চলচ্চিত্রসহ সামগ্রিক সাংস্কৃতিক সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।

দেশে এখন শিক্ষিত মানুষের সংখা বাড়ছে, শিক্ষিত তরুণরা এখন অনেক ইতিহাস সচেতন অমিত সম্ভাবনার আধার, আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা তারুণ্যকে যেনো কেউ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নষ্ট বানোয়াট ইতিহাস পড়িয়ে মগজধোলাই না করতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচী ও বয়সভিত্তিক পরিকল্পিত পাঠ্যসূচী নির্ধারণ করতে হবে। তারুণ্যকে  বঙ্গবন্ধু,মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের চার মূলনীতিতে ঐক্যবদ্ধ করা গেলেই আগামীর ঐক্যবদ্ধ টেকসই উন্নয়ন,শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিবেশ বিনির্মাণের ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

অন্যথায় কোন দলীয় স্বার্থহাসিলের রাজনীতির বলি হবে তারুণ্য, দেশ বঞ্চিত হবে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় চেতনা থেকে। শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন-ই সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য যথেষ্ট নয় রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী মহলকে এ বিষয়টি প্রায়োরিটি বিবেচনা করেই দেশের ভবিষ্যত পলিসি নির্ধারণ করতে হবে।
আমেরিকা, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেনের মত  বিশ্বের সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি প্রতিবেশি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও এসব দেশ ও জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতির পিতাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য রয়েছে বলেই তারা উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এসব দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশও সমৃদ্ধতর,  শক্তিশালী হয়েছে। জাতীয় সমৃদ্ধি ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিবেশ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, অন্যথায়; আমাদের কোন অর্জনই দেশকে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে পারবেনা বলেই মনে করি।  

পরিশেষে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির পিতাকে নিয়ে কবি রফিক আজাদের সুরেই বলতে চাই, 
'তার রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে,
সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ:
তার ছায়া দীর্ঘ হতে-হ’তে
মানিচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে!'


উল্লেখ্য যে, জাতির পিতার বাবা শেখ লুতফর রহমান কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রদত্ত উক্তি দিয়েই শেষ করছি, ' আমিও যেহেতু বাঙালি, বঙ্গবন্ধু আমার-ও পিতা।'


ইয়াসির আরাফাত-তূর্য,সাংগঠনিক সম্পাদক,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।