আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন
'ফুলটাইম’ সাধারণ সম্পাদক চান শেখ হাসিনা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দলের জন্য ‘ফুলটাইম’ কাজ করতে পারেন এমন একজন সাধারণ সম্পাদক বের করে আনতে চান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
সেজন্য মন্ত্রীর বাইরেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিকল্প কাউকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলছে তার। আর মন্ত্রী থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে এমনই আভাস দলীয় সভাপতির।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা দিয়ে দলের ভবিষ্যৎ সাধারণ সম্পাদক কাকে করা যায় দলীয়ভাবেও এমন একটি মূল্যায়ন করিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এক ডজন কেন্দ্রীয় নেতার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া দলীয়ভাবেও কাকে দলের ভবিষ্যৎ সাধারণ সম্পাদক করা যায় সে ধরনের একটি মূল্যায়ন ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা হাতে নিয়ে রেখেছেন।
এর মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্যও রয়েছেন। সরকারি সংস্থা এবং নিজের মূল্যায়ন– এ দুটি নিয়ে গবেষণা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এবার দলের জন্য যিনি সর্বোচ্চ সময় দিতে পারবেন তাকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করবেন দলীয় সভাপতি।
দলের অন্য নেতারা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও দলের সাধারণ সম্পাদককে এবার মন্ত্রীর দায়িত্বে রাখা হবে না।
ওই কর্মকর্তার দাবি, সাধারণ সম্পাদক হতে হলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে এই সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে শেখ হাসিনা।
সে সঙ্গে মন্ত্রিপর্যায় থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক করতে হলেও তাকেও ছাড়তে হবে মন্ত্রিত্ব। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার দলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি।
দলীয় সভাপতি কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিকবার হুঁশিয়ার করে বলেছেন, দল না থাকলে সরকার থাকবে না। তাই দলকে শক্তিশালী করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, দলের বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় সারা দেশে আওয়ামী লীগের দুর্বল চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শেখ হাসিনা।
তাই দলকে গুরুত্ব দিয়ে দলীয় কাজে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে পারে তেমন একজন সাধারণ সম্পাদক বের করবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ ব্যাপারে তিনি কথাও বলেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ এক নেতাকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মন্ত্রী থাকবা না সাধারণ সম্পাদক হবা? দলের এক সংসদ বলেন, সংসদীয় দলের একটি সভায় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেছেন সাধারণ সম্পাদক এবার মন্ত্রী থাকবে না।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এ ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে উঠেছেন। আর দলের সাধারণ সম্পাদককে এই মুহূর্তে দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবছেন তিনি।
তাছাড়া মুজিববর্ষ পালন করতে হলে দলের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তাই সাধারণ সম্পাদক যে-ই হবেন তাকে ফ্রি রাখতে চান শেখ হাসিনা।
সম্পাদকমণ্ডলীর ওই নেতা আরও বলেন, দলীয় সভাপতির পর্যালোচনা হলো অনেক সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতায় থাকায় নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভোগ করার মানসিকতার কারণে দলের অবস্থা দুর্বল হয়ে উঠেছে।
এসব বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সরকারের কোনো দায়িত্বে থাকবে না– এ ব্যাপারে মনস্থির করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ক্ষমতায় থেকে দল পরিচালনার জন্য দলীয় দায়িত্ব ছেড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সেদিকটিও বিশেষভাবে মাথায় রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সরকারে বাবার এই কাজটিও দলের জন্য করতে চান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ওই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদককে আর মন্ত্রী রাখতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওই সময়টা দল ও সরকারের অবস্থা কী ছিল তা নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা গবেষণা করেন। আর তাতে দল শক্তিশালী ছিল এমনটা মনে করছেন তিনি। সেখান থেকেও দলীয় সাধারণ সম্পাদককে এবার মন্ত্রী না রাখার ব্যাপারে ধারণা নিয়েছেন শেখ হাসিনা।