ঢাকা বুধবার, ২৫শে জুন ২০২৫, ১২ই আষাঢ় ১৪৩২


এনবিআরে আন্দোলন

‘সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ইন্ধন’ দেখছেন অর্থ উপদেষ্টা


২৫ জুন ২০২৫ ১৭:১৫

আপডেট:
২৫ জুন ২০২৫ ২২:৪০

ফাইল ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সংস্কার প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার কিছু ‘সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ইন্ধন’ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে নেমে সরকারি কর্মচারীরা আইন লঙ্ঘন করলেও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্থ উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন। এদিন অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর ও কাস্টমস ক্যাডারের একটি প্রতিনিধি দলকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এ বৈঠকের জন্য বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় সময় বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে। ওদের ক্যারিয়ারের কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এনবিআর একটা স্বতন্ত্র বিভাগ হবে। ওদের মর্যাদা বাড়বে। ওদের ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ হবে। ওদের পদোন্নতিটা আরও ভালো হবে। এখন তাদের কারা কী বুঝিয়েছে; ভেতরের ব্যাপারস্যাপার আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন। ওরা যেটা করেছে, যে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, এটা কোনো সরকারি কর্মচারী, বিশেষ করে এনবিআরের কেউ কোনো দিন করেনি। এটা আপনার আমার ব্যাপার না। পুরা দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজস্বের ব্যাপার। বন্দর, স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির ব্যাপার। আমি বলেছি, এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা আলোচনা করে সমাধান করা যাবে না।”

আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ইন্ধন নিয়ে তার ধারণার পেছনের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এনবিআরে সংস্কার করার কারণ হচ্ছে, এখানে আগে অনেক রকম অসঙ্গতি ছিল। সেখানে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নেই। এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের সরকারের সময় কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী লাভবান হতেন, ভালো যারা তারা সুবিধা পেতেন না। এনবিআর সমান সুবিধার নিশ্চিতের ধারে কাছেও ছিল না। অতএব আমি অনুমান করে বলছি, এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ আছে। না হয় ক্যারিয়ার ট্যারিয়ার নিয়ে ওরা হঠাৎ করে এতো চটে গেল কেন? অন্য কোনো বিষয় যদি না থাকে তাহলে এমন হওয়ার কথা না। এটা হলো আমার অনুমান। আমি ব্যবসায়ীদের ওভাবে দোষ দিচ্ছি না।”

আন্দোলনের মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তারা চাকরিবিধি লংঘন করছেন কিনা, প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা বলেন, “এটা তো, হ্যাঁ, আমরা একটু ধৈর্য্য ধরছি। চাকরি করতে হলে অনেক বিধিনিষেধ মানতে হবে, শৃঙ্খলা থাকতে হবে।”

আলোচনার আহ্বান উপদেষ্টার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ দাবির মধ্যে জারি করা সবশেষ দু’টি বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ দাবি করে তা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার ঢাকার আঁগারগাওয়ের রাজস্ব ভবনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতীকী প্রতিবাদ করেন তারা। একই সঙ্গে সবশেষ বদলি আদেশ অনুযায়ী পাঁচ কর্মকর্মতার এ দিন নতুন দপ্তরে যোগদানের নির্দেশনা থাকলেও সেখানে তারা যোগ দেননি।

চেয়ারম্যানকে 'আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী' আমলা আখ্যা দিয়ে এবং তার বিরুদ্ধে 'দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত' থাকার অভিযোগ তুলে পরিষদ সোমবার নতুন কর্মসূচি ডেকেছে। এনবিআর চেয়ারম্যানকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে অপসারণ না করা হলে শনিবার থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে ঘোষণাও করা হয় পরিষদের তরফে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ আওতা বহির্ভূত থাকবে।

রাজস্ব সংস্কারে সেমিনার করতে গেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে কক্ষ বরাদ্দ না দেওয়া, আগের আন্দোলনে জড়িতদের বদলি আদেশ জারি, এনবিআর ভাগ করে দু'টি বিভাগের যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল তা বাস্তবায়নে গঠিত সমন্বয় কমিটির মধ্যে পরিষদের প্রতিনিধিত্ব না রাখায় চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জোরালো হয়েছে।

এ অবস্থায় অর্থ উপদেষ্টা আলোচনায় বসার জন্য কর ও কাস্টমস ক্যাডোরের প্রতিনিধি দলকে আহ্বানের বিষয়টি জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, “সরকার প্রত্যাশা করে যে, এই আলোচনার মাধ্যমে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা সম্ভব হবে।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া প্রণয়ন করে মার্চের প্রথম সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করা হয়। পরিমার্জিত আকারে ১২ মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঘন্টাব্যাপী সভা হয়। সে সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, রাজস্ব সংস্কার কমিটিসহ সকল অংশীজনের সাথে বিশদ আলোচনা করে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে।

এরপরও আন্দোলন চলমান থাকায় ২৫ মে অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় হতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে বলে অবহিত করা হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। তারপর ২২ জুন থেকে আন্দোলন আবার শুরু হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ফের আন্দোলন শুরু হলে অর্থ উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের তার সাথে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বুধবার বিকালে পরিষদের সিদ্ধান্ত সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে বলেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। বিকেল ৪টায় তাদের এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।